Sunday, May 31, 2015

ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো বহুজাতিক কোম্পানীর পকেটে

 সৈ য় দ  মে হে দী  হা সা ন

১.
দুই বন্ধু ১০ টাকা দিয়ে এক প্যাকেট বাতাস কিনল। প্যাকেট ছিড়েতো অবাক; ওমা... বাতাসের প্যাকেটে দেখি চিপস আছে।
বন্ধ দু’জন বিএম কলেজে ঢুকেছে। মোবাইল ফোন কোম্পানী রবি’র বিশাল সাইনবোর্ড দেখে প্রশান্তিতে আটখানা। প্রথম বন্ধু দ্বিতীয় বন্ধুকে বলল, মুদি দোকান একটা পেয়েছি। চল কিছু খাই। দুই বন্ধু থ। কাছে এগিয়ে গিয়েই শোনে গানের শব্দ ভেসে আসছে। এবার দ্বিতীয় বন্ধু প্রথম বন্ধুকে অবাক হয়ে বলে, ওমা... মুদি দোকানে আজকাল গান-বাজনা শিখায়? তবে দুই বন্ধুরই ভুল ভাঙ্গে এবং যথারীতি লজ্জা পায় যখন দেখে মুদি দোকানে রূপ নেয়া ঘরটি আসলে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিএম কলেজ ভিত্তিক, নাম ‘সংস্কৃতি পরিষদ’। দু’জন চিন্তায় পড়ে, সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রটি কেন মুদি দোকানের মত

Saturday, May 30, 2015

বৌ-ছি খেলায় প্রতিবাদের ভাষা ও স্বরুপ বিশ্লেষণ





সৈ য় দ  মে হে দী  হা সা ন


গল্পটা এরকম যে, এমন একটা সময় ছিল বৌ-ছি খেলা ছাড়া ভাল লাগতো না। ফুসরতে ৮/১০ জন মিলে গেলেই উঠানে, অফসলী জমিতে, মাঠে জমে উঠতো খেলাটি। বৌ-ছি যে এখন খেলছে না কেউ, তা কিন্তু নয়। তবে তুলনামুলক আলোচনায় বিলুপ্ত প্রায়। কালে ভদ্রে হয়তো কোথাও জমে ওঠে। আমরা এটুকু নিশ্চিত যে, প্রতিটি উপকরণের উপযোগীতা রয়েছে। আছে প্রয়োজনীয়তা এবং সু-সময়। সে হিসেবে বৌ-ছি খেলার উপযোগিতাটা আসলে কোন স্তরে? নতুবা বৌ-ছি খেলার মোক্ষম কি হাতিয়ার যা পাড়া-মহল্লা-অনুর্বর জমি মাতিয়ে রয়েছে। অঙ্গা-অঙ্গি হয়ে গেছে বাঙালী কৃষ্টি ও সংবেদনশীলতায়। গ্রাম-বাংলার

Friday, May 29, 2015

বরিশালের লোকসঙ্গীত : রয়ানি

বরিশাল নগরীর মনসা বাড়ি মন্দিরে অনুষ্ঠিত রয়ানি আসর


দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী

সাধারণত লিখিত নয় বলে লোকসংগীত একজন মানুষ হতে ভিন্নমানুষে এর অবয়ব পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সময় ও স্থানের বিভিন্নতায় সংগীতের বিষয়বস্তুতেও পরিবর্তন আসে। সমাজ সংস্কৃতির বিবর্তনেও গানের কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে। লোকসংগীত হয়ে ওঠে বৈচিত্রময়। এগুলোর বিচিত্রতা রয়েছে সুরে, কথায়, তালে ও পরিবেশনের পরিবেশে। বাংলাদেশের লোকসংগীতে এত ভিন্নতা রয়েছে বলে এগুলোর বিজ্ঞানম্মত বিশ্লেষণের জন্য বিষয়োপযোগি শ্রেণীবিন্যাস প্রয়োজন।

সংগীত পরিবেশনের স্থিতিকাল বা দীর্ঘসূত্রিতার ভিত্তিতে বরিশাল

Thursday, May 28, 2015

‘পরষ্পর’ কাঙ্ক্ষা আর অপ্রাপ্তির পরম্পরা


জীবনানন্দ দাশ



লিখেছেন: পার্থ সারথি

একজন কবি তার কোন একটি কবিতায় কি বলতে চেয়েছেন তা বিশ্লেষণ করতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে রচনার সময়,পরিবেশ ,প্রতিবেশ সম্পর্কে। অর্থাৎ,কবির ভাবনা কোন কোন বিষয়ে আবদ্ধ বা অবর্তিত  তা আমাদের  বুঝতে হবে। যদিও তা থেকেই যে আমরা কবির ভাবনাটাকে যথার্থ ভাবে উপলব্ধি করতে পারবো এমন নাও হতে পারে। এখানে কবিতা সম্পর্কে কবির বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যগুলোকে একত্রিত করেও আমরা বোঝার চেষ্টা করতে পারি কবি কি বলতে চেয়েছেন। মূলত আমরা যে কবিতাটা নিয়ে আলোচনা করবো প্রথমেই  সেটা রচনার সময়টাকে নির্দিষ্ট করি। ‘পরষ্পর’ কবিতাটি রচিত হয়েছে ১৩৩৩ সালে এবং প্রথম প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন  সময়ের উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ‘প্রগতি’ তে। জীবনানন্দ দাশ এর প্রকাশিত কাব্যগন্থের মধ্যে যে কাব্যগন্থটি সবচাইতে বেশী আলোচিত,সমালোচিত হয়েছে এ কবিতাটি  সেই ‘ধূসর পান্ডুলিপি’তে অন্তর্ভুক্ত। আমরা যদি

‘দাসপ্রথা’র নূতন রূপ


দাসপ্রথার কথা শুনিলে শুরুতেই মনে হইতে পারে, তাহা তো দূর অতীতের কথা—এই আধুনিক সময়ে সভ্যতার ওই কলঙ্ক মুছিয়া গিয়াছে বহু পূর্বেই। দাসপ্রথা পূর্বের মতো নাই, তাহা সত্য বটে, কিন্তু এক্ষণে আমরা স্পষ্ট করিয়া লক্ষ্য করিতেছি—পুরাপুরি বিলুপ্ত হয় নাই মানবেতর দাসপ্রথা। প্রকৃতপক্ষে দাসপ্রথার আধুনিক রূপ এমনই ছদ্মবেশী, এমনই ছলনাময় যে, তাহাকে স্বাধীন জীবন বলিয়াই ভ্রম হয়। সমপ্রতি

Wednesday, May 27, 2015

মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে বির্তক, ডাক্তারের অভিজ্ঞতা

মৃত্যুর পরেও জীবন রয়েছে? মৃত্যুর পর আত্মার কোনও অস্তিত্ব থাকে? এই প্রশ্নে প্রায়শই আমরা তর্ক করি। কখনও কখনও অকাট্য যুক্তি দিয়ে আত্মার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করার চেষ্টা করি। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে সব বিশ্বাস ফিকে হয়ে যায়। প্রত্যক্ষ প্রমাণ না থাকায় বইয়ের পাতায় স্থান পায় না আত্মার অস্তিত্ব।


 তেমনি হয়ত ডাক্তার ইবেন আলেকজান্ডারের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা (NDE- Near Death Experience) সমাদর পায়নি বিজ্ঞানজগতে। কিন্তু তাঁর দাবি, তিনি মৃত্যুকে উপলব্ধি করছেন।

অথবা, ইন দ্যাট টাইম উই ওয়্যার স্লিপিং

অধিবাস্তবের উন্মাদ, তোমার কাঁকড়া ছড়ানো ফর্সা মেয়েটার যৌনাঙ্গ দেখে প্লুত হয়েছি। এখন সন্ধ্যা (ধানমণ্ডি ৩২-এ)। পাশেই চিৎকার করছে বারে-আটকা (অ্যারামে) রঙিন টেলিভিশন। রেসলার আর কয়েকজন যৌনদাসী খুঁটে যাচ্ছে যৌবন ধরে রাখার টোটকা। তোমার পিস্তল বের করো। ব্লু-ফিল্ম ফ্রিজিং করা আছে। তুমি চাইলেই নিয়ে নিতে পারো। শোনো, হিপ্পি বোকাচোদাদের কথা কানেও তুলো না। সুপারওম্যান সাথে নিয়ে সমুদ্র ঘুরে এসো। হাতঘড়ি, শপিংমল আর আউট-ল— এই তিনকে ভুলে যাও। হাসতে হাসতে গড়িয়ে যেও না কিন্তু! এক বুড়োভাম

আমরা প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না

যে অবস্থানে দাঁড়িয়েছে দেশ এটাকে কোন সংজ্ঞায় ফেলা যায়? বিকল্প কোন রাজনৈতিক দল নেই যে মানুষ ভরসা করবে সেটায়। অবশিষ্ট রইল দুই। উভয়ে মুখোমুখি এবং জেদপূরণ করতে গিয়ে এবার জনগণ ও জনগণের বিরাগভাজন। শম্বুক গতিতে বহু প্রত্যাশার যুদ্ধাপরাধীর বিচার। জামায়াত নিষিদ্ধের

যখন খুলে নাও নবর্বষের শাড়ি

কেস স্টাডি-১:
পহেলা বৈশাখ। আনুমানিক সন্ধ্যে ৬ টা। টিএসসির মোড়। প্রচুর ভিড়। এমন সময় মাইক্রোবাসের সামনে জটলা দেখে এগিয়ে যায় লিটন নন্দীসহ কয়েকজন । জটলার ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় একটি মেয়ে আর তাঁর স্বামীকে । ২৬-২৭ বছরের মেয়েটিও নববর্ষের শাড়ি পড়ে ঘুরতে বের হয়েছিলো স্বামীর সাথে। সেখান থেকে যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয় গায়ে কোন শাড়ি ছিল না মেয়েটির। স্বামীকে মারা হচ্ছিল বেধড়কভাবে। সম্ভ্রম বাঁচাতে উদ্ধারকারীদের মধ্যে একজন মেয়েটিকে তাঁর গায়ের পাঞ্জাবী খুলে পড়িয়ে দেন । ওদিকে সম্ভ্রমহরণকারীর একজন বলছিলো এমন দৃশ্য আর পাওয়া যাবে না। ভিডিও করেন তাড়াতাড়ি।

কেস স্টাডি-২:
ছোট ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন টিএসসিতে। যা নিয়ে বাসায় ফেরত গেলেন কল্পনাও করেন নি তিনি । গ্যাংদের হাতে যখন পড়লেন তখন তিনি চিৎকার করে বলছিলেন..”ভাই, আমার সাথে আমার বাচ্চা আছে ,আমাকে ছেড়ে দেন” ।

এমন অনেক ঘটনাই ঐ দিন ঘটেছে টিএসসিতে। হতভাগ্য মেয়েগুলোকে ঘিরে উচ্চস্বরে বাজানো হচ্ছিল ভুভুজেলা আর্তচিৎকার যাতে বাইরে শোনা না যায় । শ্রেফ শিকার ধরে ফেলা আদিম মানুষ যেন। 

১৯ টা সিসিটিভি ক্যামেরা , তারপরও আমাদের পুলিশ বাহিনীর হাতে কোন প্রমাণ নেই, কোন অপরাধি ধরা পড়ে নি । ধরা পড়েছিলো যে কজন তাদেরও ‘ভাই’ ডেকে ছেড়ে দেয়া হল। যখনই ভাবছি এসব কথা ক্ষোভ আর লজ্জায় চোখের জল আটকাতে পারছি না। এটাইকি আমার জন্মভূমি? বিশ্বাস করতে পারছি না এগুলো ১৯৭১ সালের নয় , এই ২০১৫ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের ঘটনা ।

বাংলার ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ যেমন মহাব্রত তেমনি বাংলা বর্ষবরণও একটি অনন্য মাধ্যম যা শ্রেণীকরণ ভুলে এক ভিত্তিমূলে দাড় করায়। কিন্তু সেসব নিয়েও হনন ও হরন খেলা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। আমরা দেখেছি ২০০১ সালে রমনার বটমুলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়েছিল। কারন বাঙালীতে বাঙালীতে যেন ঐক্য না থাকে, প্রতি পদেপদে শুরু হয় হানাহানি। ভেঙ্গে পরে নিজস্বতা। আমাদের যেন পরিচয় দেবার মত নিজেদের কিছু না থাকে তারই ‘মসলা’ এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঘাত। ইতিমধ্যে দেখেছি পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লিটন নন্দী বলছেন, তিনি সেদিন বেশ কয়েকজন নারীকে বস্ত্রহরণ করতে দেখেছেন। 

আমাদের নিরাপত্তা দেবার কথা যাদের তাদের বোল কিন্তু এবার যথারীতি ভোলে পরিণত হয়েছে। তারা (পুলিশ) বলছে, বিচ্ছিন্ন কয়েকটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলেও সেদিন বস্ত্রহরণের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জোরালো দাবি জানানো হচ্ছে। কোনো কোনো মিডিয়া ঘটনাটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। পুলিশ বলছে, ‘বিচ্ছিন্নভাবে সেদিন দু’একটি উত্ত্যক্তের ঘটনা ঘটেছে। টিএসসি এলাকায় স্থাপিত পুলিশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে। এর বেশি কিছু নয়।’  এমন নীতিবোধহীন বক্তব্য পেতে আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় বাংলাদেশে যে পুলিশ পালন করি সে তো নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে অন্তত পহেলা বৈশাখের ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে এভাবে বলা অন্যায় কাজ করেছে প্রশাসন বলে মনে করি। কারন ঐ ঘটনা যদিও হতে পারে রাজনৈতিক ঘুটি চাল। তবে প্রশাসনেরও রাজনীতি করার এখতিয়ার কে দিয়েছে। ঘটনা ঘটবে আর আপনারা উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে যাবেন সেটা কতটা যোগ্যতা সম্পন্ন? বাংলাদেশে যখনই র্স্পশকাতর ঘটনা ঘটেছে তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে পুলিশ বলেছেন বিএনপি করেছে, আবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে বলছেন আওয়ামী লীগ করেছে। এটা কি প্রশাসনের কাজ? টাকা নেয়ার সময়েতো কানা কড়ি কম নেন না তাহলে বাংলাদেশে আমার মা- বোন ও আমাদের সম্ভ্রম রক্ষা কেন পাবে না? পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, টিএসসি এলাকায় স্থাপিত ক্যামেরায় উত্ত্যক্তের দৃশ্য ধরা পড়লেও বস্ত্রহরণের দৃশ্য কেন ধরা পড়লো না? সেদিন প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল টিএসসিতে? গণমাধ্যমের বক্তব্যে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজের কোথাও তারা বস্ত্রহরণের মতো ঘটনা দেখেননি। এমন ‘ফুলিশি’ বক্তব্যের পরও কিন্তু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আছেন। প্রতক্ষদর্শী লিটন নন্দী গনমাধ্যমে বলেছেন সেটা অনায়াসে বিবেচনা যোগ্য। নন্দী বলেছেন, তিনি বস্ত্রহরণের শিকার এক নারীকে নিজের পাঞ্জাবি দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন। পুলিশের বস্ত্রহরণের বিষয়ে তার যুক্তি, পুলিশ দায়িত্ব পালন করলে ফুটেজে যাদেরকে যৌন হয়রানির দায়ে পুলিশ পিটাচ্ছিল তাদেরকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে গাড়ি চললো এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন গেট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও কেন খোলা ছিল? ফুটেজে যদি অভিযুক্তদের চেহারাই ভালোভাবে বোঝা না যায় তাহলে এত মানুষের ভেতরে কি ঘটেছিল তা কিভাবে বোঝা যাবে? এসব যুক্তি তুলে ধরে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে লিটন নন্দীর ভাষ্য, সেদিন সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহবাগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আসার পথে রাজু ভাস্কর্যের কাছে বেশ কয়েকটি স্থানে জটলা দেখি। এসব জটলা থেকে নারীদের চিৎকার শুনতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র নারীদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ বস্ত্রহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তখন আমি ও আমার সংগঠনের কয়েকজন সেখানে গিয়ে তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ২০ মিনিটের দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাশে দেখতে পাই একটি বড় জটলা। তার ভেতর থেকে একজন নারীর বাঁচাও বাঁচাও আওয়াজ আসছে। ভেতরে শ্লীলতাহানি হচ্ছে বিষয়টি বুঝতে পেরে বখাটেদের ধাক্কা দিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করি। ঢুকে দেখি, কালো পাঞ্জাবি পরিহিত একজন, মহিলার বয়ফ্রেন্ড অথবা স্বামী হতে পারে- সে বিবস্ত্র ওই নারীকে জড়িয়ে রেখেছে। তখন আমি গায়ের পাঞ্জাবি খুলে ওই মহিলাকে দেই। পরে তাকে রিকশায় উঠিয়ে দিলে- রিকশার ফুট উঠিয়ে ওই নারী পরনে থাকা অফ হোয়াইট শাড়িটি পরে আমার পাঞ্জাবিটি ফেরত দেয়। টিএসসির বেশ কয়েকটি স্থানে একই ঘটনা ঘটলে ঠেকাতে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার হাত ভেঙে যায়। এদিকে নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইশাত কাশফিয়া ইরার বক্তব্য, ওই দিন আমি ভাইয়ের সঙ্গে হল গেটে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় রিকশা নিয়ে একটি মেয়ে হল গেটে আসে এবং রিকশা থেকে নেমে হলের গেস্টরুমের দিকে দৌড় দেয়। আমিও তার পেছনে পেছনে গিয়ে দেখি ওই মেয়েটির ব্লাউজটি ছেঁড়া। চুলগুলো ছিল এলোমেলো। পরনের শাড়িটিও ছিল উল্টাপাল্টা অবস্থায়। এ সময় তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। পরে পরণের কাপড় ঠিক করে দেয়ার সময় ওই নারী জানান, তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপিতে কাজ করেন এবং আজিমপুরে থাকেন। এছাড়া ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন হকার জানিয়েছেন, তিনি ওই দিন বস্ত্রহরণের ঘটনার সময় পাশেই ছিলেন এবং একজনকে পাঞ্জাবি খুলে বস্ত্রহীন ওই নারীকে জড়িয়ে দিতে দেখেছেন। এত প্রমান থাকতেও যখন প্রশাসন বলে বস্ত্রহরণের কোন ঘটনা ঘটেনি তখন ভাবনা এসে যায়, আমরা আমাদের সময়ে নেই। অন্য কোন সময়ে বেচে আছি। যে সময়ের কোন পরিচয় নেই। যে সময়ে মানুষের জন্ম ও মৃত্যু দুটোই অনাকাক্সিক্ষত। তবে এটুকু ধারনা করা সঙ্গত যে, নববর্ষ উৎসবকে নিবৃত করতে কেউ না কেউ পরিকল্পনা করছেন। বস্ত্রহরণের ঘটনার একটি অনুল্লেখিত বক্তব্য আছে হয়তো। আমার মনে হয়, পরিকল্পকরা এটা বুঝাতে চেয়েছে সম্ভ্রম বাচাতে আগামী উৎসবে কোন অভিভাবক তার কন্যাকে এধরণের বাঙালীয়ানার উৎসবে যেতে দিবেন না। ফলে দিান্তে দিন জনশূণ্য উৎসব বন্ধ হয়ে যাবে। এধরনের চক্রান্ত করতে পারে যারা মুক্তমনাদের খুন করছে। কিন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে এমনটি কি আদৌ হওয়া সম্ভব? আর পুলিশ, প্রশাসন বা সরকারের কি ভূমিকা দেখছি ঘটনার পর। শুধু এক খাত থেকে দায় এড়াতে অন্যত্র সরানোর কথা চালাচালি চলছে। 

আমরা এগুলো পছন্দ করি না। কিন্তু কেউতো নেই ধর্ষিতার পক্ষে। এভাবে বাংলাদেশে হনন ও হরনের আয়ুস্কাল বাড়তে থাকলে স্বাধীনতা আর রক্তের দাম রইল কিভাবে? আচ্ছা একাত্তরের ধর্ষণকারীদের যেরকম ফাসি হচ্ছে, ঠিক সেরকমভাবে এই ধর্ষণকারীদের কি ফাসি হবে? ফাসি না হোক, কোন বিচার হবে এদের? নাকি এখনকার ধর্ষণকারীদের ঘৃণা করার মত কেউ নাই, নাকি এখনকার ধর্ষণকারীরা বেশি আতংকজনক না। 


লেখক: ওয়াহিদা আলম

মজার দেশ

আওয়ামী সরকারের নাটকের কাছে আমপাবলিক এখন অসহায়, যেমন ছিল বিএনপি জামাতের জঙ্গিবাদীশাসনামলে । যখনই সরকার বেকায়দায় পরে তখন এমন সব হত্যাকান্ড ঘটে যা আলোচনার চরম খোড়াক পায় । বদৌলতে পিপিলিকার মত পুড়ে মরছে বা মারছে মানুষ । একন ধারাবাহিকভাবে ব্লগার হত্যা হচ্ছে । দায় নিচ্ছে আনসারুল্লাহ । আমার মতে এটা পুরোটাই নাটক । হয়তো সরকারের নির্দেশনায় এ কাজ করছে কোন বিশেষ বাহিনী । নয়তো দেশে এত গোয়েন্দা, পুলিশ, গুমবাহিনী থাকতে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে পারছে না । এটা বিশ্বাস করা যায় না । লাদেন যেমন আমেরিকার সৃষ্টি তেমনি ব্লগার হত্যাকারীরাও সরকারের সৃষ্টি । প্রায় শোনা যায় সরকারের রাঘব বোয়াল মহল এসব নিয়ে উদোর পিন্ডি বুদো বিএনপি জামাতের ঘাড়ে ফেলছে । কথা হল, বিম্পি জামাততো এখন বিলুপ্তপ্রায় দল তারা দল টিকাবে না ধর্মপ্রচার করতে আসবে । আসলে সরকারি নাটক বন্ধ না করলে দেশে গনতন্ত্র আসবে না । ঘরে ঘরে আসবে ক্রসফায়ারে নিহত মৃতদেহ বা কথিত আনসারুল্লাহর পয়গাম ।

যুদ্ধবিধস্ত বাঙলায় আজও আমরা দেখছি না নতুনের সূচনা


লিখেছেন: সৈয়দ মেহেদী হাসান


রাস্তায় পরে আছে সদ্য খুন হওয়া, লাশ। এক নারী চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। যারা আছেন তারা যেন ভেলকিবাজি খেলা দেখছিল। কেউ মুঠোফোনে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত। ওদিকে কেউ ভিড় ঠেলে কেটে পরছিল। নয়তো কারো নতুন মুখ অত্যান্ত কৌতুহলে উদয় হল। আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে যা হয়তো আমরা কেউ জানি না বা বুঝতে পারিনি।
দূরে পুলিশ দাড়িয়ে কেমন করে উপভোগ করছিল সেটা বোধ করি স্মরণ করিয়ে দেবার উপযোগ রাখে না। কারন গাটরির পয়সা খুইয়ে এখন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবর্তে একপাল ধাতব দানো পালন করছি, সে আর নতুন কি?

সমস্ত কথাগুলোই একটি সন্ধ্যাকে ঘিরে। ২৬ ফেব্রুয়ারি, টিএসসির ফুটপাত। বর্তমান বাংলাদেশে মূলধারার বিজ্ঞান চর্চা যাদের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল তাদের একজন ড. অভিজিত রায়ের খুন হবার দিন। কে এলো আর কে গেল..... সেটাই কেউ জানলো না। শুধু হাজার হাজার মানুষের মাঝে লুটিয়ে পরলেন। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে জ্ঞানের বদৌলতে রক্ত উদগিরণ করলেন। ক্ষতি হয়ে গেল বাংলাদেশের। এই ক্ষতি হচ্ছে নিয়মিত। কোন না কোন কারনে প্রতিদিন আমরা মানে বাঙালীরা খুন হচ্ছি অন্য কারো হাতে। কি কারনে খুন হতে হয় সেটাও জানা হয় না। তাহলে কি হচ্ছে? খরচা হয়ে যাই শুধু। না আমার প্রয়োজনে বা দেশের প্রয়োজনে। হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার রাজীব হায়দারের কথা হয়তো ভুলে যান নি কেউ। সে তালিকায় এসে দাড়ালেন অভিজিত রায়। আগামী দশ বছরে এ তালিকা আরও বাড়বে বুঝি। মন্দের ভালো আওয়ামী লীগের গদি ফসকে গেলে হয়তো অভিজিত রায়’রা গণহত্যার শিকার হবেন। কারন রাষ্ট্রযন্ত্র যখন প্রবলভাবে বিকল হয়ে পরে তখন হত্যা আর গণহত্যা তো আলাদা বলতে কিছু থাকে না। এখন আমরা সে সবেরই কোন সিগন্যাল পাচ্ছি না কি?
কথা হল অভিজিত রায় কেন খুন হন? উত্তরটা আমার চেয়ে আপনাদের প্রস্তুত রয়েছে বেশি। আপনাদের উত্তরটা হল ধর্ম নিয়ে বাড়-বাড়ন্ত জানতে চাওয়া। তবে আমি জানি এটি মূলত কোন কারণ নয়। ধরুন ব্রাশে পেস্ট হল এটি। কতক্ষন দাঁত ঘসে ফেলে দিবেন। আসলে, আরও একটি কারন আছে যা ঘেটে দেখছি না।
জাতিসত্ত্বার বিরোধপূর্ণ আদর্শ সেটাইতো অধিকতর প্রয়োজনীয় কারণ যারা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় আছেন ধর্মীয় কুলুফ কাজে খাটিয়ে মসনদারোহী হবেন । আসলে গদি দখলই বাংলাদেশের শেষ বক্তব্য। ১৯৬৬ সালের দ্বি-জাতি তত্ত্বের আগুন আজও নেভেনি। যদিও ১৯৭১ সালে বাঙালী ক্ষয়ের মাধ্যমে একটি মানচিত্র, জাতীয় সঙ্গীত ও একটি পতাকা উত্তোলনের স্বাধীকারটুকু পেয়েছি কিন্তু স্বাধীনতা পাইনি। নির্মলেন্দু গুন দাদা যদিও সকাশে বলেছেন, স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়ে গেছে। আসলে ঐ শব্দটিও আমাদের না। ভদ্রলোকতো আওয়ামী লীগের কবি বিধায় স্তুতির কম করেননি। এ কথা সত্য শেখ মুজিব স্বাধীনতার আহ্বান করে গেছেন। কিন্তু স¦াধীনতা আজও আসেনি। আজও আমরা যুদ্ধবিধস্ত একটি দেশে প্রাণপন বেচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। অভিজিত রায় তেমনই যুদ্ধে হারানো কয়েন। আচ্ছা অভিজিত রায় কি ধর্মীয় অনূভূতি নিয়ে সাপলুডু খেলেছিল? তার লেখা বই পড়ার যতটুকু অভিজ্ঞতা তাতে তেমন কিছু মনে হয় না। তবুও তার বিরুদ্ধে সেই পুরানো হাতিয়ার। যেমনটি ছিল ড. হুমায়ুন আজাদের বেলায়। ধর্মফেরিওয়ালারা যখন দেখলেন তাদের অনেক কিছুই জেনে গেছেন/ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে বা তাদের জন্য হুমকির হয়ে উঠছে তখনই স্বিদ্ধান্ত নিচ্ছে কালোপথ রাঙাবার।
আবার অভিজিত হত্যা যে শুধু ধর্মশালার উপহার তেমনটি ভেবে ঘুম যাবারও বিশেষ কারন বোধ করি না। একটি ভিন্ন সমীকরণও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। হুমায়ুন আজাদ. রাজীব হায়দার হত্যা ও তসলিমা নাসরিন নির্বাসন কাহিনী যতটা ধর্মের মাতাল বোতল পেটে ঢেলে হয়েছে তার চেয়ে অভিজিত হত্যা কেন যেন মনে হয় খুব বেশি রাজনৈতিক। ২০১৫’র ফেবরুয়ারীর আশপাশ দিয়ে টিএসসি এলাকায় একটি লাশ চেয়ে খেলা জমিয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে। যেখানে দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক গোয়েন্দা সংস্থা মুখ ভোতা করে আছেন সেখানে আমার অনুমান মিথ্যা ধরে নিয়েও বলতে হচ্ছে, কারো দখলিস্বত্ব টিকিয়ে রাখতে বা কেউ দখল নিতে এই ক্ষতিটা করেছে দেশের।

সুতরাং অভিজিত রায় অন্তত বাংলাদেশে তুরুপের তাস হবেন সেটা ভেবে নেয়া অযৌক্তিক নয়। কারন হুমায়ুন আজাদ খুন হন, ক্লু খুজে পান না সরকার। রাজিব খুন হন বিচর এগোয় না। তসলিমা নাসরিন ফিরতে পারেন না দেশে। এগুলো কি নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র নয়?
পরিশেষে সমবেদনা ছাড়া আমার কাছেও যে আর কোন মুখোশ নেই। প্রিয় হুমায়ুন আজাদ... জেগে থাকুন। প্রিয় অভিজিত.... সাতটি তারার তিমিরে থাকো। প্রিয় তসলিমা.... সবার আকাশ আছে; তোমাদের চারপাশে নীল সুতায় বোনা জাল আছে। আমাদের ঘুমাতে যেতে দিও না যেন।

বাংলাদেশ: বোবার দেশ

 
শুরুতেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর একটি উক্তি প্রাণিধানযোগ্য। সাম্প্রতি নর্দার্ন বিশ্বদ্যিালয়ের এক সমাবর্তনে তিনি বলেছেন, ‘আমার বক্তৃতা লেখাই থাকে। লেখার বাইরে আমার বলার কোন সুযোগ নাই।’

দ্বিতীয় দফায় একটু আলোকপাত করতে চাই সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ এর আক্ষেপের কথায়। তিনি বলেছিলেন, ‘একমাত্র কবর জিয়ারত ছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আর কোন নিজস্ব ক্ষমতা নেই। ’


বাংলাদেশের ইতিহাসে সততা ও নিষ্ঠাবান যে দুজন রাষ্ট্রপতি তাদের মন্তব্য যদি হয় এরকমের তাহলে বুঝুন এবার আমরা মানে আম পাবলিকের অবস্থা কি? আমরা তো প্রতিবন্ধি হয়ে গেছি।

কথা বলার কোন অপশন নাই বাংলাদেশে। এ দেশ এখন বোবাদের দেশ। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত তিন নারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তাদের ছবি সম্বলিত ব্যানারে ঢাকা পরে যায় ব্যস্ততম সড়ক। তার আড়ালে আরও চাপা পড়ে গণধর্ষিতা মেয়েদের চিৎকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনৈক সংগীত শিল্পিকে টেলিভিশনের লাইভ প্রগ্রামে টেলিফোন করে শুভেচ্ছা জানাতে পারে কিন্তু ধর্ষিতা মেয়েটিকে দেখতে যেতে পারেন না।

ব্রয়লারের মুরগীর মত মুক্ত চিন্তার মানুষদের জবেহ করছে যারা তাদের দমনে না নেমে যেন মৌন সর্মথনে রয়েছেন সরকার। এর পিছনে গদি রক্ষা বা খুয়ানোর যে বিশাল সরল অংক আছে সেটা নিয়েই আছেন স্বাধীনতা ও ধর্মের লিজ গ্রহণকারীরা।

জনগন তাদের কাছে ফাও প্যাচালের মত। নয়তো রাষ্ট্রপতির বাক স্বাধীনতার বর্হিপ্রকামটা বোধকরি এভাবে হত না।

অথচ আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে, ‘চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হইল।’