মু হা ম্ম দ মা মু ন ফ রা জী
সমাজের ভিতর স্বর্গ ও উপসর্গ উভয়ই মানুষকে নিয়ে খেলা করে। আদম-হাওয়ার গন্দম খাওয়ার মত নিরঙ্কুশ ঈশ্বরের সাপলুডু খেলা বলা চলে। খেলায় কখনো ছক্কা পরে, কখনো পুট বা কানা অর্থাৎ ১’র দানও পরে। আমরা যদিও চাই বার বার ছক্কার দান ফেলতে, কিন্ত ঐ দান ফেলতে পারাটা হয়ে ওঠে ক’জনের? এই প্রশ্ন ও কি কি সমস্যায় সমাজ জীবনের শেকর বাকর বিকলাঙ্গ সেটা নিয়ে হরদম আলোচনা দেখি চায়ের টেবিলে, পেপার-পত্রিকায় এমনকি মন্ত্রী পরিষদও বাদ পরে না। সমস্যার কারন অনেকই রয়েছে যদিও ওদিকে দৃষ্টিপাত আমাদের নেই।
এই ‘নেই’টার পিছনে বস্তত আরও একটি কারন রয়েছে, সেটা যেকোন কিছুর তলানিতে না পৌছানো। এটা এক ধরনের অপরাধ। দিন দিন সমাজকে না দেখে অথচ সেখানে জীবন ধারন সাবলীল জীবন বলা মুশকিল। এভাবে অবচেতনে জাতি বা আমাদের অর্জণ বর্জণ যে চুরি হয়ে যাচ্ছে। সেটুকুও অন্তত জানছি না। যার কারনে পেশী শক্তির কব্জায় দৈনন্দিন বাঁধা পরছে। আর সবশেষে অসহায় আত্মসর্মপন। খুব ছোট্ট অথচ বিষাক্ত কারনে জাতির তারুণ্য আজ দিক-বিদিক। এই যদি হয় দেশ বা জাতির মধ্য যৌবনের অবস্থা তাহলে বাংলাদেশ যে পথ এগোবে, তা কিভাবে?
উপরোক্ত কথাগুলো একটি ফিল্মের সারর্মম। যদিও গল্পের বয়ান ভিন্ন, তবে আমার মনে হয় দর্শকের কাছে এভাবেই পেছনের গল্প ধরা দেবে। সঙ্গে সাফল্যে পোড়া ফুসফুসের যন্ত্রনা। আপতঃ ছিনেমার গল্প যে এমন হতে পারে তা ভাবতেই মনে আসে বাংলা ছিনেমা এখন আর তরুন-তরুণীর প্রেমে ঢলাঢলি বা পারিবারিক ফ্রেমে বন্দি নয় তারই ইঙ্গিত দেয়। আমরা এটা জানি যে ছিনেমা সংস্কৃতি আন্দোলনের সরাসরি হাতিয়ার।
সেটা বিভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে বিগত দিনে। কিন্ত তানভীর মাহমুদ গাজী তার সিনেমার টিম সহযোগে দিব্যি প্রকাশ্যে মহরা দিলেন এবার। মজার কথা হল তানভীর মাহমুদ এর এই সিনেমাটি দিয়েই হাতেখড়ি । নাম রেখেছেন ‘ইদুঁর’। সৃষ্টিশীল প্রথম কাজ তো প্রথম সন্তানের মত তাই চেষ্টায় যে কম করেননি তা বোঝাই যায়।
সরল গল্পে বলা আছে, এক বেকার যুবকের জীবন দহন। অনেক কায়ক্লেশ করে তিনখান সার্টিফিকেট জুগিয়েছে। টানাহেচরার জীবনে নিয়মিত টাকা খরচা করে কিনছে চাকরীর খবর। ইতিমধ্যে প্রেম উঁকি দিয়েও ধরা দিচ্ছে না যেন। তবে শেষাবধি একটি ইন্টারভিউ দেয়ার সুযোগ জোটে। এক কথার অতটুকুন বাচনে আরও ঘটতে থাকে নানাবিধ ঘটনা।
প্রশ্ন জাগতে পারে এখানে সমাজের সম্পৃক্ততাটা কোথায়? তার উত্তর পূর্ণ দিবে ’ইদুঁর‘। মাত্র ২০ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের জীবন-বাচনিক ছবিটিতে মূল চরিত্রের একটিও ডায়ালগ নেই। যা আছে সব পার্শ্বকথা বা শব্দ। তবু অনেক কথা এবং প্রশ্ন জেগে ওঠে অবলীলায়। রবীন্দ্রনাথতো বলেছেন ,‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে......’ কিন্ত বাস্তবতা হল সহজ করে না বললে কেউ বোঝে না। কঠিন পাঠ তাই সহজ ভাবে পাঠোদ্ধার করানোর দায়িত্ব পরে পরিচালকের। ইদুঁর ফিল্মটিতে গ্রাজুয়েট বেকারদের দহন ও দাহন উল্টে পাল্টে দেখিয়েছে দারুন মুন্সিয়ানার মাধ্যমে। সমাজের যে শ্রেণীর দহন বস্তুত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত আমরা ক’জনে সে খেয়াল রাখি?
র্নিমাতা: তানভীর গাজী |
অনেকেই আপত্তি তুলবেন মাত্র ২০ মিনিটের একটা সেলুলয়েড কিচ্ছাকে কেন ফিল্ম বলবো? এর কোন জবাব আছে বলে মনে হয় না। উত্তরহীনতার মূলত দুটি কারণ। এক. ফিল্ম হতে হলে কি বৈশিষ্টের হতে হবে সেটা ঠিক করে দেয়ার কেউ আছে বলে বোধ করি না। দুই. গল্পের প্রয়োজনে জীবৎকাল হবে সেটাই যৌক্তিক।
ইদুঁরকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে শর্ট ফিল্ম এমনকি আদৌ ফিল্ম বলতে রাজি নই। এটা ফিল্মের সীমা অতিক্রম করেছে। যদিও নির্মাণ ও কলাকুশলে দৈন্যতা রয়েছে। তাই বলে চিন্তা, শক্তিশালী বক্তব্য ও উপস্থাপনের আঙ্গিক ইদুঁরকে আন্দোলনের মুকপাত্র করে দিয়েছে। এটা অত্যান্ত জরূরী মেধা ও মননশীলতার একটি কার্যকরি আন্দোলন। এ আন্দোলন একজন থেকে ক্রমে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়–ক এমনটাই প্রত্যাশা। জয় হোক সৃজনশীল শিল্পের।
সূত্র: লেখাটি ‘আনন্দলিখন’ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত
No comments:
Post a Comment