Wednesday, June 10, 2015

এ এক লজ্জার বয়ান: মশিউর কি বাঁচবে?

‘প্রতিদিন যতগুলো সিগারেট খাচ্ছেন তার একটির দাম অন্তত এই ছেলেটি বাঁচাতে দিন’ 


সরকারী বিএম কলেজ শিক্ষা রাজনীতি আর সংস্কৃতিতে হেভিওয়েট প্রতিষ্ঠান বলে জনশ্রুতি আছে। তা বেশ আরামের সংবাদ, কারন ওটি আমারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু কতটা উচ্চ মানসিকতার সে নিয়ে প্রশ্ন আছে আমার। প্রায়ই দেখা যায় কয়েকজন ছাত্র বা ছাত্রী রাস্তার মাঝে বাক্স পেতে বন্ধুর জন্য চাঁদা তুলছে। এটিও ভালো কথা। আজও দেখলাম এই অবস্থা। ব্যানারে লেখা ‘আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচান’।
এটি একজন ছাত্রের আকুতি।হ্যা আমরা সবাই বাচতে চাই। যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনিও বাচতে চান, যিনি রিকশাওয়ালা তিনিও বাঁচতে চান, যিনি ছাত্র তিনিও বাঁচতে চান। আর রাষ্ট্রের অবহেলায় ওয়াশার পাইপের মধ্যে পড়ে যাওয়া শিশু জিহাদও বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি জিহাদের কি হয়েছিল তা সবাই হরর মুভি দেখার মত টিভি স্ক্রিনে দেখেছি। অতঃপর বলতে হয় কেউই বাঁচতে পারে না। না আমি, না আপনি।


যেহেতু আমরা সবাই মরবো সুতরাং বলা চলে বেঁচে থাকার আশা করে কি লাভ? 

প্রসঙ্গটা এখানেই।
বিএম কলেজে ফেরা যাক। ঐ যে বলেছি বাচঁতে চাইছে একজন ছাত্র।নাম মশউর রহমান। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ছাত্র।

মশিউরের বেঁচে থাকাটা অন্য পাঁচজনের চেয়ে জরুরি। কারন সে দেশকে দিতে পারবে বা সেই প্রত্যয়ে আজও লেখা-পড়া ছেড়ে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবিরের মাহফিলে যোগ দিয়ে জাতিকে হতাশ করেনি।

বিএম কলেজেতো অনেক ছাত্রনেতা। পোস্টারে ঢেকে যায় অলি-গলি।কেন্টিন দখল হয়ে যায়। শখকে এনে দুই লাখ টাকায় চপল হাসি আর অন্তরঙ্গ সময় কাটান কেউ কেউ। তাদেরই দেখি টেণ্ডারের জন্য উন্মাদ হয়ে উঠতে।

সানসি সাইকেলওয়ালা ছাত্র দুইদিন ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরছেন।এরা খুব ছাত্র নেতা বনে যান।

তাহলে অপর ছাত্র মশিউরকে বাঁচাতে সংঘবদ্ধ ভিক্ষায় নামবে কেন তার বন্ধুরা? ওনারা কিসের নেতা সে প্রশ্ন এসে যায়। ছাত্রদের নাম বেচে ছাত্রনেতা!

এ শুনে ছাত্রদল বা শিবিরের লম্ফ দেবার কোন কারন নেই যে দেখ ছাত্রলীগ পঁচা। আমরা দুধে ধোয়া। আপনাদের আমলেও এর ব্যত্যয় হয় না।

আচ্ছা মশউর রহমান কি বাঁচবে?
কলেজের প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষকদের প্রাইভেট ফি যা তাতে প্রতি মাসে ওরকমের দুজন মশিউরকে কিডনি কিনে দিতে পারেন।কাউকে বাক্স পেতে ভিক্ষায় নামতে হয় না। কিন্তু কি তাই হয়? আমি জানি তেমনটি নেই স্যাররা। স্যাররা এখন ক্লাশ করানোর চেয়ে প্রাইভেট পড়াতে বেশি ভালো মনে করেন। তারা তাদের বউয়ের লিপিস্টিক কিনে দিতে পছন্দ করেন। কোন মশিউরের কিডনি কিনে দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

ফলে মশউরের বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়া জিহাদের উদ্ধার নাটকের মতই তাজা খবর তার পরিবারের কাছে।

তবে এটুকু বলতে পারি, টেণ্ডারবাজির টাকা থেকে যদি একটা অংশ মশিউরের মত ছাত্রের জন্য কেউ দিত তাকে দেবতা মনে করতাম। আবার বাঙলায় নেতা আসছে। কিন্তু সেটা সম্ভব না। কারন অর্থ মন্তী ছাত্র-রাজনীতিকারীদের কি বলেছিলেন তা হয়তো ভুলে যাননি কেউ।


আর শিক্ষকরা যদি প্রাইভেটের টাকার শতকরা ৫% মশিউরদের দান করতেন তাহলে হয়তো মেনে নিতাম বিএম কলেজ আসলেই উচ্চ মানসিকতার পরিচয় দিতে পারে।

তবে যে সমস্ত বন্ধুরা মশউরের জন্য এক কথায় ভিক্ষা করছেন তাদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা রেখে বলছি এই মানসিকতাই আসলে অগ্রপথিকের পথরেখা। এমন বন্ধুর খুবই দরকার। দেশ জাতি আর ব্যাক্তির ভিতরে এদের লালন করা উচিত। পাশাপাশি যারা আছেন সবাই আসুন মশউরকে বাচাতে যে যা পারি সেটুকু দিয়ে সাহায্য করি তাকে বাচানোর। কারন মশিউরকে দিয়ে আর যা হোক দেশের দেশের ক্ষতি হবে না বলছি।

No comments:

Post a Comment