লিখেছেন: সৈয়দ মেহেদী হাসান
রাস্তায় পরে আছে সদ্য খুন হওয়া, লাশ। এক নারী চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। যারা আছেন তারা যেন ভেলকিবাজি খেলা দেখছিল। কেউ মুঠোফোনে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত। ওদিকে কেউ ভিড় ঠেলে কেটে পরছিল। নয়তো কারো নতুন মুখ অত্যান্ত কৌতুহলে উদয় হল। আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে যা হয়তো আমরা কেউ জানি না বা বুঝতে পারিনি।
দূরে পুলিশ দাড়িয়ে কেমন করে উপভোগ করছিল সেটা বোধ করি স্মরণ করিয়ে দেবার উপযোগ রাখে না। কারন গাটরির পয়সা খুইয়ে এখন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবর্তে একপাল ধাতব দানো পালন করছি, সে আর নতুন কি?
সমস্ত কথাগুলোই একটি সন্ধ্যাকে ঘিরে। ২৬ ফেব্রুয়ারি, টিএসসির ফুটপাত। বর্তমান বাংলাদেশে মূলধারার বিজ্ঞান চর্চা যাদের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল তাদের একজন ড. অভিজিত রায়ের খুন হবার দিন। কে এলো আর কে গেল..... সেটাই কেউ জানলো না। শুধু হাজার হাজার মানুষের মাঝে লুটিয়ে পরলেন। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে জ্ঞানের বদৌলতে রক্ত উদগিরণ করলেন। ক্ষতি হয়ে গেল বাংলাদেশের। এই ক্ষতি হচ্ছে নিয়মিত। কোন না কোন কারনে প্রতিদিন আমরা মানে বাঙালীরা খুন হচ্ছি অন্য কারো হাতে। কি কারনে খুন হতে হয় সেটাও জানা হয় না। তাহলে কি হচ্ছে? খরচা হয়ে যাই শুধু। না আমার প্রয়োজনে বা দেশের প্রয়োজনে। হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার রাজীব হায়দারের কথা হয়তো ভুলে যান নি কেউ। সে তালিকায় এসে দাড়ালেন অভিজিত রায়। আগামী দশ বছরে এ তালিকা আরও বাড়বে বুঝি। মন্দের ভালো আওয়ামী লীগের গদি ফসকে গেলে হয়তো অভিজিত রায়’রা গণহত্যার শিকার হবেন। কারন রাষ্ট্রযন্ত্র যখন প্রবলভাবে বিকল হয়ে পরে তখন হত্যা আর গণহত্যা তো আলাদা বলতে কিছু থাকে না। এখন আমরা সে সবেরই কোন সিগন্যাল পাচ্ছি না কি?
কথা হল অভিজিত রায় কেন খুন হন? উত্তরটা আমার চেয়ে আপনাদের প্রস্তুত রয়েছে বেশি। আপনাদের উত্তরটা হল ধর্ম নিয়ে বাড়-বাড়ন্ত জানতে চাওয়া। তবে আমি জানি এটি মূলত কোন কারণ নয়। ধরুন ব্রাশে পেস্ট হল এটি। কতক্ষন দাঁত ঘসে ফেলে দিবেন। আসলে, আরও একটি কারন আছে যা ঘেটে দেখছি না।
জাতিসত্ত্বার বিরোধপূর্ণ আদর্শ সেটাইতো অধিকতর প্রয়োজনীয় কারণ যারা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় আছেন ধর্মীয় কুলুফ কাজে খাটিয়ে মসনদারোহী হবেন । আসলে গদি দখলই বাংলাদেশের শেষ বক্তব্য। ১৯৬৬ সালের দ্বি-জাতি তত্ত্বের আগুন আজও নেভেনি। যদিও ১৯৭১ সালে বাঙালী ক্ষয়ের মাধ্যমে একটি মানচিত্র, জাতীয় সঙ্গীত ও একটি পতাকা উত্তোলনের স্বাধীকারটুকু পেয়েছি কিন্তু স্বাধীনতা পাইনি। নির্মলেন্দু গুন দাদা যদিও সকাশে বলেছেন, স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়ে গেছে। আসলে ঐ শব্দটিও আমাদের না। ভদ্রলোকতো আওয়ামী লীগের কবি বিধায় স্তুতির কম করেননি। এ কথা সত্য শেখ মুজিব স্বাধীনতার আহ্বান করে গেছেন। কিন্তু স¦াধীনতা আজও আসেনি। আজও আমরা যুদ্ধবিধস্ত একটি দেশে প্রাণপন বেচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। অভিজিত রায় তেমনই যুদ্ধে হারানো কয়েন। আচ্ছা অভিজিত রায় কি ধর্মীয় অনূভূতি নিয়ে সাপলুডু খেলেছিল? তার লেখা বই পড়ার যতটুকু অভিজ্ঞতা তাতে তেমন কিছু মনে হয় না। তবুও তার বিরুদ্ধে সেই পুরানো হাতিয়ার। যেমনটি ছিল ড. হুমায়ুন আজাদের বেলায়। ধর্মফেরিওয়ালারা যখন দেখলেন তাদের অনেক কিছুই জেনে গেছেন/ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে বা তাদের জন্য হুমকির হয়ে উঠছে তখনই স্বিদ্ধান্ত নিচ্ছে কালোপথ রাঙাবার।
আবার অভিজিত হত্যা যে শুধু ধর্মশালার উপহার তেমনটি ভেবে ঘুম যাবারও বিশেষ কারন বোধ করি না। একটি ভিন্ন সমীকরণও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। হুমায়ুন আজাদ. রাজীব হায়দার হত্যা ও তসলিমা নাসরিন নির্বাসন কাহিনী যতটা ধর্মের মাতাল বোতল পেটে ঢেলে হয়েছে তার চেয়ে অভিজিত হত্যা কেন যেন মনে হয় খুব বেশি রাজনৈতিক। ২০১৫’র ফেবরুয়ারীর আশপাশ দিয়ে টিএসসি এলাকায় একটি লাশ চেয়ে খেলা জমিয়েছিল জাতীয় রাজনীতিতে। যেখানে দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক গোয়েন্দা সংস্থা মুখ ভোতা করে আছেন সেখানে আমার অনুমান মিথ্যা ধরে নিয়েও বলতে হচ্ছে, কারো দখলিস্বত্ব টিকিয়ে রাখতে বা কেউ দখল নিতে এই ক্ষতিটা করেছে দেশের।
সুতরাং অভিজিত রায় অন্তত বাংলাদেশে তুরুপের তাস হবেন সেটা ভেবে নেয়া অযৌক্তিক নয়। কারন হুমায়ুন আজাদ খুন হন, ক্লু খুজে পান না সরকার। রাজিব খুন হন বিচর এগোয় না। তসলিমা নাসরিন ফিরতে পারেন না দেশে। এগুলো কি নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র নয়?
পরিশেষে সমবেদনা ছাড়া আমার কাছেও যে আর কোন মুখোশ নেই। প্রিয় হুমায়ুন আজাদ... জেগে থাকুন। প্রিয় অভিজিত.... সাতটি তারার তিমিরে থাকো। প্রিয় তসলিমা.... সবার আকাশ আছে; তোমাদের চারপাশে নীল সুতায় বোনা জাল আছে। আমাদের ঘুমাতে যেতে দিও না যেন।
No comments:
Post a Comment